শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:৪৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সিরাজগঞ্জে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস পালিত টাইফয়েডের টিকা কার্যক্রম উপলক্ষে কনসালটেশন ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত সিরাজগঞ্জে টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন ২০২৫ উদ্বোধন মানসিক ভারসাম্যহীন নারীর ভিক্ষা করা জমানো তিন বস্তা টাকা উদ্ধার বগুড়ায় আগাম শীতকালীন সবজি চাষ লাভবান হওয়ার আশা কৃষকদের কাজিপুরে সোনামুখী মেলায় বসেছে নানা পণ্য সামগ্রীর পসরা বাজারে কাঁচামরিচ, বেগুন সহ বেশকিছু সবজির দাম কমলেও বেড়েছে ডিমের দাম মালচিং পদ্ধতি তরমুজ চাষ করে সফলতা পেয়েছে তরুণ উদ্যোক্তা মেহেদী হাসান চলনবিল অধ্যুষিত তাড়াশ উপজেলা এখন সম্ভাবনার জনপদ মাছ, হাঁস ও কৃষিতে বদলে গেছে গ্রামীণ অর্থনীতি বগুড়ায় ধনেপাতা চাষে হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে

বগুড়ায় সবজির চারা বিক্রিতেই বিপুল পরিমান আয়ের সম্ভাবনা

দীপক সরকার, বগুড়া / ২৯ বার
আপডেট : সোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

সারাদেশে খ্যাতি রয়েছে বগুড়ার লাল মরিচের। এছাড়াও আলু, বাঁধাকপি, ফুলকপিসহ নানা জাতের সবজি উৎপাদনের পাশাপাশি ধান চাষেও বাম্পার ফলনে বগুড়ার কৃষকরা অন্যতম। এবার সেই কৃষকরা কয়েক কোটি টাকার আগাম জাতের সবজির চারা উৎপাদনে দিন রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।
তাছাড়া শাজাহানপুরের শাহানগরের সবজির চারা দেশজুড়ে খ্যাতি হওয়ায় দেশের জামালপুর, ময়মনসিংহ, গাইবান্ধা, রংপুর, নাটোর, নওগাঁ, পাবনা, টাঙ্গাইল, ঢাকা, সিরাজগঞ্জ সহ অন্যান্য জেলা থেকে ক্রেতারা চারা কিনতে আসেন বলে দাবী চাষীরা।
এক্ষেত্রে চাষিরা বলছেন, জেলার শাজাহানপুর উপজেলার বড়পাথার ও শাহনগর গ্রামের প্রায় ৩ শতাধিক কৃষক নার্সারির মাধ্যমে আগাম জাতের সবজির চারা উৎপাদন করছেন। এসব নার্সারিতে শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন সবজির চারা উৎপাদন ও বিপণন হয়ে থাকে। রবি মৌসুমে প্রতিদিন প্রায় ৩ থেকে ৪ লাখ চারা বিক্রি হয় এই নার্সারি পল্লীতে। দেশের সিংহভাগ জেলায় এসব চারা বিক্রি করা হয়।
জানা যায়, সবজির চারা উৎপাদনকারী গ্রাম বলে খ্যাত বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার শাহানগর ও বড়পাথার গ্রাম। সবজি নার্সারি পল্লীতে কৃষকদের পদচারণায় এখন মুখর। কেউ জমি তৈরি করছেন, কেউ বীজ বপন করছেন, কেউ বীজ বপনের পর পরিচর্যা করছেন। আবার কেউ চারা বিক্রি করছেন। সারা বছর এখানে চলে বিশাল কর্মযজ্ঞ। সবজি চারা পল্লীতে চারা ভলো হওয়ায় নতুন নতুন জেলা থেকে কৃষকরা আসছেন চারা নিতে।
এই এলাকাজুড়ে গড়ে ওঠেছে দেশের সর্ববৃহৎ সবজি নার্সারি পল্লী। এখানে রীতিমতো সবজির চারা উৎপাদনে বিপ্লব ঘটেছে। ১৯৮৫ সালের দিকে প্রথমে শাহানগর বড়পাথার এলাকায় সবজি নার্সারি ব্যবসা শুরু হয়। ধীরে ধীরে এর প্রসার ঘটে বর্তমানে শাহানগর, বড়পাথার, চুপিনগর, দুরুলিয়া, বৃ-কুষ্টিয়া, খোট্রাপাড়াসহ কয়েকটি গ্রামজুড়ে গড়ে উঠেছে প্রায় ৩০০টি ছোট বড় নার্সারি। এখানে ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, বেগুন, পেঁপেসহ হাইব্রিড জাতের ৮ থেকে ৯ রকমের মরিচের চারা উৎপাদন করা হয়। তবে সবজির চারা গ্রামের মূল চারা হিসেবে বিক্রি হয় মরিচ চারা। হাইব্রিডসহ একাধিক জাতের মরিচের চারা বিক্রয় হয় এখানে। এতে কর্মসংস্থান হয়েছে বিভিন্ন বয়সী-নারী পুরুষসহ হাজারো মানুষের। শাহানগরের নার্সারি পল্লী থেকে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে চারা নিতে ভিড় করছেন কৃষকরা। নার্সারিগুলো ঘুরে ঘুরে পছন্দের চারা সংগ্রহ করছেন তারা।
বছরের আগস্ট মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত আগাম শীতকালীন সবজি চারা নিতে ক্রেতায় মুখরিত থাকে এ অঞ্চল। শীতকালীন আগাম সবজি বীজতলা বৃষ্টি থেকে রক্ষায় বাঁশের তৈরি ‘বেতি’গুলো রিংয়ের মতো বসিয়ে উপরে সাদা, কালো পলিথিন দিয়ে পুরো বীজতলা মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বীজতলা বীজ ফেলার পর ঝুরঝুরে মাটি ছড়িয়ে দিতে হয়। বীজতলা প্রস্তুতে জমির মাঝ বরাবর নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে ছোট ছোট আইল ও বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের নালা তৈরি করে বীজ বপন করা হয়েছে। আগাম শীতকালীন সবজির চারা নিতে দেশের বিভিন্ন জেলার ক্রেতার সমাগম হয় শাহানগরে। এর মধ্যে জামালপুর, ময়মনসিংহের ক্রেতা বেশি। এরপর রয়েছে গাইবান্ধা, রংপুর, নাটোর, টাঙ্গাইল, ঢাকা, সিরাজগঞ্জসহ অন্যান্য জেলা।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলার শাজাহানপুর উপজেলার শাহনগর গ্রামে চাষিরা ৩০ থেকে ৪০ হেক্টর জমিতে প্রায় ৩০০টির বেশি নার্সারিতে এসব চারা উৎপাদন করে যাচ্ছেন। চলতি রবি মৌসুমে কয়েক কোটি টাকার আগাম জাতের সবজির চারা বিক্রির আশা কৃষকদের। এখানকার চারার গুণগতমান ভালো হওয়ায় দেশের বিভিন্ন জেলার ক্রেতাদের সমাগম ঘটে। এখানে রীতিমতো সবজির চারা উৎপাদনে বিপ্লব ঘটেছে। কৃষি অফিস থেকে তাদের সকল ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হচ্ছে।
নার্সারি মালিক আমজাদ হোসেন জানান, গত ৩০ বছর আগে স্বল্প পরিসরে সবজি চারা উৎপাদন হতো এই এলাকায়। কিন্তু এখন উপজেলার কামারপাড়া, মোস্তাইল ও শাহনগরের অঞ্চল জুড়ে সবজি চারার চাষ করছেন নার্সারি মালিকরা। তবে তার হাত ধরেই সবজির চারা উৎপাদনের উত্থান হয়। বর্তমানে এখানে নার্সারি সংখ্যা প্রায় তিন শতাধিকের বেশি।
তিনি বলেন, এক বিঘা জমিতে চারা উৎপাদনে খরচ হয় ২ লাখ টাকা। আর এই চারা বিক্রি করা হয় ৪ লাখ টাকায়। আবহাওয়া অনূকুলে থাকলে চাষিদের লাভ ভালো হয়। সেই আশা নিয়ে সেচ, সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করে চারাগুলোর পরিচর্যা করছেন তিনি।
আরেক নার্সারির মালিক নজরুল ইসলাম জানান, তিনি ৮ বিঘা জমিতে হাইব্রিড জাতের মরিচ, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটোর চারা উৎপাদন করছেন। বর্তমানে এক হাজার মরিচের চারা বিক্রি হচ্ছে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকায়। কপির চারা প্রতি হাজার ১৬০০ থেকে ১৮০০ টাকা, বেগুন ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা ও টমেটো ১ হাজার থেকে ১৩০০ টাকা হাজার বিক্রি করা হচ্ছে।
চারা কিনতে আসা শাজাহানপুর উপজেলার চন্ডিবর গ্রামের কৃষক আব্দুল গফুর জানান, এখানকার চারার গুণগতমান অনেক ভালো। ফলনও ভালো হয়। তিনি গত বছর ১৫ শতক জমিতে হাইব্রিড জাতের মরিচের আবাদ করেছিলেন। ৩০ হাজার টাকা খরচ করে তিনি আড়াই লাখ টাকার মরিচ বিক্রি করেছেন। চলতি মৌসুমে তিনি আবারো নার্সারি পল্লীতে থেকে চারা কিনতে এসেছেন।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান ফরিদ জানান, জেলার শাজাহানপুর উপজেলার শাহনগর গ্রামে চাষিরা প্রায় ৩’শ টির বেশি নার্সারিতে আগাম সবজির চারা উৎপাদন করে যাচ্ছেন। এই এলাকার কৃষকরা চারা উৎপাদনের মাধ্যমে বগুড়াকে সারাদেশের সাথে পরিচয় করে দিচ্ছেন। কৃষি বিভাগ থেকে তাদের বিভিন্ন পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হচ্ছে।


এ জাতীয় আরো সংবাদ
কারিগরি সহযোগিতায়: সিরাজগঞ্জ ইনফো