দেশের বৃহত্তম জলাভূমি চলনবিল। সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নাটোর এই তিন জেলা জুড়ে বিস্তৃত এই বিলে এক সময় বছর জুড়েই পানি প্রবাহ থাকলেও বর্তমানে বর্ষা মৌসুমেই পানি পাওয়া যায় এই বিলটি। তবে পানির এই স্থায়িত্ব থাকে ২ থেকে ৩ মাস। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও বিলের বুকে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মানে চলনবিল হারাচ্ছে তার বৈশিষ্ট্য। এছাড়াও অবাধে নিষিদ্ধ জালের ব্যবহারে বিলুপ্ত হচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় পরিকল্পিত উদ্যোগ নেয়ার তাগিদ সংশ্লিষ্টদের।
বিস্তৃত জলরাশির মাঝে দিগন্ত রেখায় সবুজের আলপনা। শান্ত জলরাশির সাথে ভেসে বেড়াচ্ছে শরতের সাদা মেঘের ভেলা। এরমধ্যেই ঢেউ ভেঙে ছুটে চলেছে নৌকা। রয়েছে নানা প্রজাতির পাখির অবাধ বিচরণ। বর্ষার স্বচ্ছ জলের সাথে প্রকৃতির যেন এক অপরূপ মেলবন্ধন। এটিই দেশের বৃহতম জলরাশি চলনবিল। যা সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও নাটোর জেলা জুড়ে বিস্তৃত। প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ এই বিলটি বর্ষা এলেই এর বিশালতা বৃদ্ধি পায়। পানিতে টইটম্বুর হয়ে ওঠে পুরো বিল এলাকা। আর এই বিল কে কেন্দ্র করেই জীবিকা নির্বাহ করে কয়েক লাখ মানুষ। চলনবিল ঘুরে দেখা যায় মাছ ধরার বিচিত্র আয়োজন। বিলের উন্মুক্ত জলরাশিতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন সিরাজগঞ্জের ৩ উপজেলার প্রায় ১০ হাজার জেলে পরিবার। জেলারা জানান, বানের পানি এলেও আগের মত আর দেশীয় মাছের দেখা মেলে না। রিং জাল, চায়না দুয়ারি ও কারেন্ট জাল সহ নিষিদ্ধ সব উপকরণ দিয়ে মাছ শিকার করায় হারিয়ে যাচ্ছে ধোঁদা, গুড়পুঁই, বাছা, গজার, ট্যাংড়া, ভেদা, টিপপুঁটি ও পানি রুইয়ের মত ৪০ থেকে ৫০ প্রজাতির দেশীয় মাছ। চলনবিলে মাছের সাথে বিলুপ্ত হচ্ছে বিলের জেলেদের পেশাও। জীবিকার তাগিয়ে অনেক জেলেই এখন শামুক-ঝিনুক ও কাঁকড়া নিধন করে বিক্রি করছেন মাছ ও হাঁসের খাবার হিসেবে। তাড়াশের কুন্দুইল এলাকায় প্রতিদিন বসছে শামুকের হাট। রাত ভর জাল দিয়ে শামুক নিধন করে এই হাটে প্রতি বস্তা শামুক বিক্রি হচ্ছে ২শ থেকে ৩শ টাকায়। প্রতিদিন কয়েক টন শামুক সরবরাহ হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। স্থানীয়রা বলছেন, চলনবিল এলাকায় বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করায় দিন দিন সংকুচিত হচ্ছে বিলের আকার। অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও যত্রতত্র পুকুর খনন করায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে চলনবিলের পানি প্রবাহে পাশাপাশি অপরিকল্পিতভাবে মাছ ও জলজ প্রাণী শিকার করায় দেশীয় মাছের উৎপাদন কমার পাশাপাশি প্রভাব পড়ছে বিলের পরিবেশ ও জীব বৈচিত্রে বলে জানান সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ এর উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান প্রফেসর মো: আব্দুল কুদ্দুস। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ শাহীনুর রহমান, বলছেন, দেশীয় মাছ পুনরুদ্ধারে চলনবিলে অভায়শ্রম তৈরির পাশাপাশি সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। তবে নিষিদ্ধ জালের ব্যবহার বন্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি। তিন জেলা জুড়ে বিস্তৃত দেশের বৃহত্তম এই জলাভূমির আয়তন গত ৮ দশকে কমেছে প্রায় ৪০৮ বর্গ কিলোমিটার। অপরিকল্পিত ভাবে সড়ক ও বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করায় চলনবিলের আকার যেমন কমছে তেমনি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে চলনবিলের পানি প্রবাহে। পাশাপাশি অবাধের মা মাছ ও জলজ প্রাণী নিধন করায় হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ ও বিভিন্ন জলজ প্রাণী। পরিবেশ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলনবিলের এই বিপর্যয় এড়াতে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রয়োজন পরিকল্পিত উদ্যোগ)।